"দৃঢ় ও স্বাধীনচেতা” বোনদের জন্য একটি বার্তা!
আমি যেসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি এবং গবেষণা করেছি, তা থেকে আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে “ইসলামী” নারীবাদ; এর সাথে কিছু নিকটাত্মীয়ের কুপ্ররোচনা, যেভাবে নারীদেরকে তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলে; তা মুসলিমদের জন্য শত্রুর সামরিক আক্রমণের চাইতেও বেশি বিপদজনক আর পরিবারগুলো ভেঙ্গে দিয়ে নতুন প্রজন্মকে নষ্ট করার পরিপ্রেক্ষিতে এর অর্জন সুদূরপ্রসারী! হ্যাঁ, কিছু অন্যায় পুরুষদের পক্ষ থেকেও ঘটে থাকে; আমি এ বিষয়ের বেশ কিছু দিক আলোচনা করেছি ‘মহিলা সিরিজ’ এ, যা —অনেক বোনের মতে—তাদের জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে এবং ধ্বংসাত্মক নারীবাদী আদর্শ থেকে তাদের ফিরিয়ে এনেছে। আমি আজ এই বিষয়টির অবতারণা করেছি কারণ সাম্প্রতিক সময়ে (গত কয়েক দশক)বিশ্বনিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলির মূল লক্ষই মনে হচ্ছে যেন এই স্লোগান - ‘নারীদের হাতে পরিবারের ধ্বংস হোক’ , এবং এই লক্ষ্যের দিকে তাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এই প্রচেষ্টায় বিশ্বনিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো মুসলিম নারীদের দৃষ্টিতে অনেক মূল্যবোধকে হেয় বা তুচ্ছ করতে সফল হয়েছে, যেমন:-
📌 সন্তানের নেয়ামত।
📌 স্বামীর চাহিদা পূরণের গুরুত্ব।
📌 ইসলামিক ভাবে সন্তান লালন-পালনের বাধ্যবাধকতা এবং দুনিয়া ও আখিরাতে এর প্রভাব।
📌 কিওয়ামার নেয়ামত (পুরুষদের সুরক্ষা, কর্তৃত্ব এবং মহিলাদের প্রতি দায়িত্ব)।
📌 জ্বীন এবং মানুষ শয়তানদের সাথে যুদ্ধে পারিবারিক দুর্গে স্তম্ভ হিসাবে একজন মহিলার ভূমিকা।
📌 ফিতরাহ (বিশুদ্ধ সহজাত প্রকৃতি) এর শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়ের নেয়ামত।
📌 মহান আল্লাহর আনুগত্যে আন্তরিকতা, নারী এবং পুরুষের জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব ও অধিকারে সন্তুষ্টি, এবং দুনিয়া ও আখিরাতে এর জন্য প্রত্যাশিত মহান পুরস্কার।
অনেক মহিলা আজকাল নিচের পার্থিব বিষয়গুলিকে অতি গুরুত্ব আরোপ করতে গিয়ে উপরের গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক মূল্যবোধগুলোকে অবজ্ঞা করেন। যেমন:
📌 বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী, এমনকি সেটা যদি উপরের মূল্যবোধগুলো বিসর্জনের বিনিময়েও হয়।
📌 মাস শেষের একটি বেতন যেটা হয়ত তার প্রয়োজনই ছিলোনা।
📌 নিজেকে নিজের কাছে এবং তার মতোই আরো অন্য বিভ্রান্ত মানুষের কাছে সফল হিসেবে তুলে ধরা (যেহেতু তিনি উল্লিখিত মূল্যবোধগুলো পরিত্যাগ করার পরে নিজেকে মূল্যহীন বোধ করতে পারেন) যেকোন মূল্যে এই “অর্জনগুলি” জীবনে বাস্তবায়ন যেন আজকের নারীর চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে। আর এই যাত্রায় নারী নিচের পন্থাগুলো অবলম্বন করে।
📌 যদি সে শরীয়াহ তে এমন কিছু পায় যা তার উদ্দেশ্যকে সমর্থন করে, তখন সে শরীয়াহর পক্ষ নেয়।
📌 যদি শরীয়াহ অধ্যাদেশ তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায়, তবে সে শরীয়াহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং ধর্মনিরপেক্ষ মানবসৃষ্ট আইনের পক্ষ অবলম্বন করে।
📌 যদি বিশ্বনিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলি তাকে তার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে, তবে সে তাদের দরজায় কড়া নাড়ে।
📌 যদি তিনি পশ্চিমে থাকেন, তবে তিনি তাদের ধর্মনিরপেক্ষ আইনকে তার স্বার্থে ব্যবহার করেন যদিও তা আল্লাহ প্রদত্ত শরীয়াহর বিরুদ্ধে যায়।
আর এই সব কিছু করার সময় সে তার কাজের যৌক্তিকতা এবং ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার অজুহাত খুঁজে।এই মহিলা কি বোঝে যে যখন সে শরীয়াহকে তার পক্ষে ব্যবহার করে এবং পক্ষে না গেলে তা প্রত্যাখ্যান করে, তখন সে তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় যাদেরকে আল্লাহ সম্বোধন করেছেন: “তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস কর? এবং কিছু অংশে অবিশ্বাস কর?” (কোরআন অনুবাদিত অর্থ: 2:85) তিনি কি বুঝতে পারেন যে তিনি অধিকারের জন্যই এসব কিছু করছেন - এ কথা বলে তিনি নিজেকে বোকা বানাচ্ছেন, বাস্তবে তিনি তার পালনকর্তার অবাধ্যতাই করছেন এবং তার আদেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছেন?তিনি কি উপলব্ধি করেন যে তিনি এমন একটি ক্রান্তিকালে বাস করছেন যেখানে তার মর্যাদা শুধুমাত্র ইসলামের নিদর্শন এবং পবিত্রতা রক্ষার উদ্যোগ, নারীর প্রতি পুরুষের দায়িত্ব, বীরত্ব আর নারীর শালীনতা এবং সতীত্বের মাধ্যমেই রক্ষা করা সম্ভব? মুসলিম ভূমিগুলোতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরা দারিদ্র, বেকারত্ব, অত্যাচার এবং নিপীড়নের সুযোগ নিয়ে যারা তার (নারীর) ক্ষতি করার চেষ্টা করে বা সুযোগ নিতে চায়; তাদের পথে এই ইসলামিক মূল্যবোধগুলোই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি কি বুঝতে পারেন যে তার নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের সময় শেষ হতে চলেছে? এর বাস্তবতা তো প্রকাশ পায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া পরিবার ব্যবস্থা, প্রবল দুষ্কর্ম, এবং পরিত্যক্তা নারীর ব্যাপকতা (যাদের নেই পুরুষদের সুরক্ষা) থেকেই। আর এদের উপর শীঘ্রই হামলে পরবে পুঁজিবাদী বৈশ্বিক সংস্থা, মানব পাচারকারী, অশ্লীলতা এবং যৌন উন্মাদনার বিক্রেতারা! তিনি কি বুঝতে পারেন যে মানবজাতির এই শত্রুরা নিচের আয়াতে বর্ণিতদের মধ্যে রয়েছে: “তারা মর্যাদা দেয় না কোন মুসলমানের ক্ষেত্রে আত্নীয়তার, আর না অঙ্গীকারের। আর তারাই সীমালংঘনকারী।."(কোরআন অনুবাদিত অর্থ; 9:10), এবং এভাবেই তারা মুসলিম নারীকে অপমানিত করে এবং তার মর্যাদা কেড়ে নেয় যেমনটি তারা তাদের পশ্চিমা নারীদের সাথে করেছে। তিনি কি বুঝতে পারেন যে “অভিযোগ হটলাইন” এবং “পরিবার সুরক্ষা সংস্থা” তখন তাকে সাহায্য করবে না?তিনি কি বুঝতে পারেন যে অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার পরে তিনি এই সবের জন্য অনুশোচনা করবেন?তিনি কি তার সর্বজ্ঞাতা রবের কালাম শুনতে পান না?: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি কাফেরদের কথা শোন, তাহলে ওরা তোমাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে দেবে, তাতে তোমরা ক্ষতির সম্মুখীণ হয়ে পড়বে।"(কোরআন অনুবাদিত অর্থ; 3:149)
ভাই ও বোনেরা, যা ঘটছে তা খুবই দুঃখজনক কারণ অজ্ঞতার কারণে একজন মানুষ তার শত্রুর চাইতেও (শত্রু যে ক্ষতি সাধন করে ) বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে যাই হোক না কেন, আমাদের নিশ্চিতভাবেই কাজ করতে হবে পরিস্থিতির উন্নয়নে কেননা এই ব্যাপারে সংস্কারের বিশাল সুযোগ রয়েছে। কারণ মহান আল্লাহ বলেছেন: “যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে।” (কোরআন অনুবাদিত অর্থ; 3:120) আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, “বোন, আপনার আশেপাশের লোকদের বিদ্রুপ কে দূরে সরিয়ে রেখে এই কথাগুলো নিয়ে ভাবুন। যারা আপনাকে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, তারা কিয়ামতের দিন আপনার কোনো পাপ বহন করবেনা।” ভাবুন নিচের আয়াত নিয়ে।
“কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার গুরুতর ভার বহন করতে অন্যকে আহবান করে কেউ তা বহন করবে না-যদি সে নিকটবর্তী আত্নীয়ও হয়। আপনি কেবল তাদেরকে সতর্ক করেন, যারা তাদের পালনকর্তাকে না দেখেও ভয় করে এবং নামায কায়েম করে। যে কেউ নিজের সংশোধন করে, সে সংশোধন করে, স্বীয় কল্যাণের জন্যেই আল্লাহর নিকটই সকলের প্রত্যাবর্তন।” (কোরআন অনুবাদ অর্থ 35:18)
হে আমার রব, সকল মুসলিম নারীদের আপনি দ্বীনের উপর সুস্থির করুন!
মূল: ড. ইয়াদ কুনায়বী বাংলা অনুবাদ: আবু আঈশা
সংযুক্তি আর এছাড়া নিচের ভাবনাগুলো দিলাম। উপরের লিখার সাথে প্রাসঙ্গিক।
কিছুদিন আগে শনিবারের হালাকাতে শায়খকে একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। প্রশ্নটি শুনে আমি বুঝতে পেরেছিলাম এটি একজন নারীবাদীর প্রশ্ন (চাই সে পুরুষ বা নারীই হোক). প্রশ্নটি ছিল এমন : অবাধ মেলামেশার পরিবেশে পড়াশোনা করা যদি মেয়েদের জন্য হারাম হয়, তাহলে সেটা একইরকম ভাবে পুরুষদের জন্য হারাম মনে না করা কি মুনাফেকি নয়? প্রশ্নকর্তা বলতে চাইছেন, অবাধ মেলামেশার পরিবেশে মেয়েরা যেতে না পারলে ছেলেরাও যাবে না। অথচ, পরিবারের একজন কাওয়াম হিসেবে পুরুষদের উচ্চশিক্ষা অর্জন, বা কোন বিশেষ জ্ঞান লাভ এবং পরিশেষে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ (চাই সে চাকরিই হোক আর ব্যবসা) একটি অবশ্যম্ভাবী প্রয়োজন। যদি অবাধ মেলামেশামুক্ত পরিবেশ না পাওয়া যায়, তাহলে কি সকল পুরুষেরা আয় রোজগারের ব্যবস্থা করা ছেড়ে দিবে? অথচ এই প্রশ্নকর্তার চিন্তা ভাবনা হল আয় রোজগারের দায়িত্ব পুরুষ এবং নারীর সমান। আর এই ভাবেই মুসলিমদের চিন্তাগুলো বিকৃত হয়েছে। এই ব্যাপারটিই ডঃ ইয়াদ কুনায়বী তুলে ধরেছেন।
এর সাথে রয়েছে মা এবং শাশুড়িদের কুপ্ররোচনা, “এতো পড়াশোনা করেছো, তোমার বাবা মার কি হক নেই তোমার আয় রোজগার উপভোগ করার (অথচ তারা বেশ ভালোই খেয়ে পড়ে বেঁচে আছেন মেয়ের আয় রোজগার ছাড়া) ? আর তা ছাড়া কেউ জিজ্ঞেস করলে কী বলব? আমাদের মেয়ে/বৌ এতো পড়াশুনা করে বাসায় বসে আছে?”
এই কারণে, সেসব আত্মীয়দের নসীহত করুন যারা মেয়েদের কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখলেই জিজ্ঞেস করে, “কী করছো এখন/ কোথায় আছো এখন?”. আর যদি তারা নিজেদের সংশোধন না করে, তবে তাদেরকে আপনার মা বোনদের থেকে দূরে রাখুন।
আর যেসব বোন ভাবছেন, আমার্ বাবা মা এর কোন ছেলে সন্তান নাই; তাহলে তারা কী করে চলবে? আসলেই কি আজকে যেসব বোনেরা পর্দা বিসর্জন দিয়ে বা কোন রকম পর্দা করে অবাধ মেলামেশার পরিবেশে কাজ করছেন, তাদের সবার বাবা মায়ের একমাত্র সম্বল তাদের মেয়েদের আয়? আর যাদের আসলেই এমন অবস্থা, তাদের উচিত বিয়ের আগে স্বামীর সাথে এই ব্যাপারে একটি মতৈক্যে পৌঁছানো তিনি ঠিক কত টুকু সময় হালাল পরিবেশে বাবা মা কে সাপোর্ট করার জন্য চাকুরী করবেন। আর খেয়াল রাখবেন আল্লাহ আপনার পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে জিজ্ঞেস করবেন; আপনি কেন নিজের সন্তানকে অবহেলা করে বাবা মাকে সাপোর্ট করার জন্য চাকুরী করেন নি , সেটা জিজ্ঞেস করবেন না। একটি এহসান করতে গিয়ে নিজের ওয়াজিব দায়িত্ব অবহেলা করবেন না।
আবু আঈশা