এতো পড়ে কী হবে
এতো পড়ে কী হবে? - একটি ভুল ধারণার অপনোদন
২২৭৫-(৯৪/১০৩৩) ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বারে দাঁড়িয়ে নাসীহাত করলেন। তিনি বললেন, উপরের হাত নীচের হাতের চেয়ে উত্তম। উপরের হাত হলো দানকারী। আর নীচের হাত হলো দান গ্রহণকারী। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২২৫৪, ইসলামীক সেন্টার ২২৫৪)
প্রথমত রাসূল সাঃ দারিদ্র্য এবং পরমুখাপেক্ষী হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। অতঃপর তিনি দেওয়ার হাতকে নেওয়ার হাত হতে উত্তম বলেছেন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাপারটি আরো ব্যাখ্যার দাবী রাখে। অসৎ এবং অযোগ্য ব্যাক্তিদের দৌরাত্ম্য, সামাজিক বিশৃঙ্খলা, নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতি সৎভাবে বেঁচে থাকাকে কঠিন করে তুলেছে দ্বিগুণ বা তার চেয়েও বেশি। বিলাসবহুল জীবন নয়, বরং সাধারণ সম্মানজনক হালাল জীবন যাপন করতে চাইলেও ভালো পড়ালেখার বিকল্প নেই। এই ব্যাপারে পশ্চিম বঙ্গের মুসলিমদের উদাহরণ দেওয়াটা খুবই প্রাসঙ্গিক। এত বিরাট জনগোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও তারা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কিছু করতে পারেনি। কেননা হিন্দুরা বিভিন্ন কায়দা করে তাদের একাডেমিক পড়ালেখায় নিরুৎসাহিত করে, সাথে আছে মুসলিমদের অনিচ্ছা। তাই এক প্রকৌশলী মুসলিম সহকর্মী (কলকাতার) বলছিলেন কয়েক গ্রাম মিলিয়ে মুসলিমদের মধ্যে তিনিই একমাত্র উচ্চশিক্ষিত। বেশির ভাগ মুসলিম হয় মুদির দোকানদার, ফেরিওয়ালা বা এবং এমন কোন পেশাজীবী যেটা দিয়ে তারা নিম্নবিত্ত বা বড়োজোর নিম্নমধ্যবিত্তের জীবন যাপন করেন; মুসলিমদের অবস্থা পরিবর্তনের কথা ভাববার সময় কোথায় ! কারো সাথে পরিচয় থাকলে এই তথ্যের বাস্তবতা যাচাই করে নিতে পারেন(অবশ্যই একজন মুসলিম কে জিজ্ঞেস করবেন)। যখন ১% এর চাইতেও কম সেক্যুলার নাস্তিকরা মিডিয়া থেকে শুরু করে আমাদের নতুন প্রজন্মের চিন্তাভাবনা দখল করে ফেলছে, তখন আমরা দ্বীনের দোহাই দিয়ে ‘এতো পড়ে কী হবে বলে?’- সন্তানদের Mediocrity এর দিকে ঠেলে দিচ্ছি। এমন অবস্থা চলমান থাকলে দেখা যাবে আমরা নিজভূমে পরবাসীতে পরিণত হয়েছি। আমার মনে হয় এখুনি এর জের আমরা কিছুটা টের পাচ্ছি এবং ভবিষ্যতে আমরা দ্বীনহীন লোকেদের গলগ্রহ হয়ে থাকবো। আমি আবারো আশ্বস্ত করে বলতে চাই, এই দাওয়াত অভিজাত হওয়ার ডাক নয়, বরং এই মুসলিম ভূমিতে আমাদের ন্যায্য হিস্সা যেন কেউ নিয়ে যেতে না পারে; তার জন্য নূন্যতম যোগ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তৈরির ডাক। আমার সন্তান হিফজ করে মোটামুটি কিছু দোকানদারী করে চলবে, এই চিন্তায় সমস্যা না থাকতে পারে, কিন্তু এমন চিন্তা পুরা কমিউনিটি এক সাথে করলে তা অবশ্যই বড় সমস্যায় রূপ নিবে, এবং সত্যি কথা বলতে আমরা এখন সেই দিকেই যাচ্ছি।
দুনিয়ার যেকোন বিষয়ে পড়ার জন্য (এটি দ্বীনি বিষয়ের বেলায় ও প্রযোজ্য) যখন আমরা নিজেদের নিবন্ধিত করি,তখন আমাদের বুঝতে হবে হালাল (মুবাহ হলেও )বলেই কাজটিতে সময় দেব ঠিক করেছি। এটিতে সময় দিয়ে আমরা এমন কিছু অর্জন করতে চাচ্ছি যেটি দুনিয়ার এমন কল্যাণ দিবে যা আমাদের আল্লাহর নিকটবর্তী করবে। তাই দুনিয়াবি পড়াশোনা করে কী লাভ? - এটি একটি চরম ভুল চিন্তাধারা। রাসূল (সাঃ) জান্নাতের অধিকাংশ মানুষকে দরিদ্র্য দেখেছেন বলে আমাদেরকে দরিদ্র্য হওয়ার নির্দেশ দেন নি। বরং তা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। আপাতদৃষ্টিতে আমরা এই মুহূর্তে এমন কিছু করছি যেটা আমরা নিজেরাই বিশ্বাস করিনা। যেমন ধরুন মুসলিম কমিউনিটিতে বিয়ের সময় প্রায় অভিবাবকরা ছেলে বা মেয়ে উভয়ক্ষেত্রেই উচ্চশিক্ষিত এবং অবস্থাসম্পন্ন চাচ্ছেন, অথচ নিজের সন্তানদের পড়ালেখার ব্যাপারে তেমন ভালো না করলেও চলবে এমন ধারণা পোষণ করছেন। কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করে লিখা শেষ করছি।
আল্লাহ সর্বাপেক্ষা বড় পরিকল্পনাকারী। তথাপি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বড় হয়ে কী করবে তার একটা সাধারণ পরিকল্পনা থাকা চাই। ধরুন, আপনার পরিকল্পনা সে আলেম হবে। কোন কারণে এই বিষয়ে তার আগ্রহের বা ক্ষমতার ঘাটতি দেখা গেলো। সে ক্ষেত্রে তার অন্য কোন বিষয়ে পড়তে হবে বা কিছু করতে হবে। বিকল্প পরিকল্পনা না থাকার কারণে হতবিহ্বল হয়ে পড়া যাবে না। খেয়াল করবেন ব্যবসা করার জন্যও জ্ঞানের কিছু শাখায় গভীর জ্ঞানের প্রয়োজন।
অবাধ মেলামেশার কারণে ছেলেরা উচ্চ শিক্ষার স্থল গুলো ছেড়ে দেবে কিনা এই ব্যাপারে নিজেরাই মতামত না দিয়ে শায়খদের শরণাপন্ন হবেন।
‘আমার তেমন উচ্চাশা নেই, ছেলেটা কোন রকম কিছু করে খেতে পারলেই চলবে’- এমন চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসুন। এর অর্থ হল উম্মাহর এই সঙ্গীন অবস্থায় আপনি বেশ অবিচলিত। সেদিন এক ছোট ভাইয়ের লিখা পড়ছিলাম- তার অভিযোগ পুরো কৈশোরটাই তার পড়তে হয়েছে সেক্যুলারদের কাছে, কেননা কিশোরদের পড়ানোর মতো অবস্থানে দ্বীনদার শিক্ষক নেই বললেই চলে।
কোন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা যখন পড়ি, সেটা তখন একটি নেয়ামত। এই নেয়ামতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। এই কথাটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলায় আরো সত্য। ভর্তুকিতে পড়ালেখা করে আসল কাজেই (পড়াশোনা) উদাসীন হয়ে পড়া আমানতের খেয়ানত বৈকি। অন্তত মুসলিমদের জন্য তা বৈধ নয়।
আল্লাহ! আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আপনি দ্বীনের উপর সুসংহত এবং শক্তিশালী করুন।
সবগুলো হাদীসের বঙ্গানুবাদ বাংলা হাদীস এপ্লিকেশন থেকে নেওয়া।
আবু আঈশা