সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্দেশ্যবিহীন বিচরণ
আমাদের মুসলিম জাতির এখন ক্রান্তিকাল চলছে - এই কথাটি হয়ত ঠিক নয়; কেননা ক্রান্তিকাল তখন শুরু হয়েছিল যখন আমরা দ্বীন শিক্ষা, আমল, শিক্ষা দীক্ষা এবং সমরশক্তি নিয়ে উদাসীন হয়ে পড়েছিলাম। এখন আমাদের অবস্থা এতটাই দুর্বল যে আল্লাহের সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ রাতারাতি সম্ভব নয়, এটাই স্বাভাবিক। এর জন্য প্রয়োজন অনেক দীর্ঘ পরিকল্পনা; যেমনটা ইহুদিরা করতে পেরেছে আর এখন পৃথিবীতে রাজত্ব করছে। এমন কি আমরা অনেকেই জানি ১৯০০ সালের দিকের খ্রিস্টান ধর্মযাজকদের সেই সম্মেলন যেখানে তারা মুসলিমদের (শায়খ মনজুরে এলাহী থেকে একটি হালাকাতে শুনেছিলাম ) খ্রিষ্টান বানাতে ব্যর্থ হয়ে কিভাবে মুসলিমদের কে তাদের ধর্ম থেকে দূরে সরানোর পরিকল্পনা করেছিলো। ফলে ‘দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই (সূরা বাকারাহ ২৫৬)’ এবং ‘তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে। (সূরা কাফিরুন ৬)’ এই আয়াতগুলো ব্যবহার করে মুসলিমরাই তাদের ধর্ম থেকে দূরে সরে গিয়েছে; আর এর পিছনে ছিল খ্রিষ্টানদের মতাদর্শিক আগ্রাসন যা তারা শিক্ষা ব্যবস্থা, টিভি অনুষ্ঠান, সাহিত্য আর চলচিত্র দিয়ে মুসলিমদের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছে । কিন্তু আমরা এই অত্যাচারের অবসান এখুনি চাই এবং কোন কষ্ট ছাড়াই চাই। সেই পরিকল্পনা তো বহু দূরে, বরং এই মুহূর্তে এই দুর্বল উম্মাহর একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হল দুআ (এবং এই কথাটি রাসূল সাঃ এর একটি সহীহ হাদীস)। অথচ এটি শুনলেই একদল হাসি ঠাট্টা করছে,এক দল রেগে যাচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষ ব্যস্ত উদ্দেশ্যহীন ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক ভিডিও দেখায়, কমেন্ট করায়, কোন এক পক্ষ নেওয়া আর এরপর অপর পক্ষকে গালাগালি দেওয়ায়। এতে করে কোন কিছু অর্জন হচ্ছে না; বরং হতাশা বাড়ছে; সাথে বাড়ছে শাসক এবং আলেমদের উপর গালাগালির বৃষ্টি। যেন, দুআ করা খুব অর্থহীন কাজ , আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘন্টার পর ঘন্টা ভিডিও দেখা আর কমেন্ট পাল্টা কমেন্ট করা বেশ ফলপ্রসূ। আমাদের ভাই বোনদের উপর অত্যাচারের খবর আমাদের অবশ্যই জানতে হবে এবং হয়তো বিতর সালাতের আগে একটি নির্দিষ্ট সময় আমরা এই বিষয়ে খবর এবং আলোচনা জেনে নিজেদের দুআ কে আরো আবেগময় করতে পারি। কিন্তু সারাদিন ব্যাপী খবর দেখা, কমেন্ট করা এবং এর মাধ্যমে দ্বীনের খেদমত হচ্ছে মনে করাটা ভুল চিন্তা বৈ আর কিছু নয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমরা দ্বীনের বিজয় চাই, এই অত্যাচার বন্ধ হোক চাই, কিন্তু এর শুরু যে নিজেদের জীবনে দ্বীন প্রতিষ্টার মাধ্যমে হবে, সেটা বিশ্বাস করতে চাই না। আল্লাহর কাছে আমাদের গুনাহ্গুলোর জন্য ক্ষমা চেয়ে দুআ করতে বললেও দেখা যাচ্ছে লোকেরা কটাক্ষ করছে। এমন উদাহরণও আমি দেখেছি যেখানে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাবেন - আমাদের সম্মানিত শায়খরা কেবল প্রশ্নোত্তর পর্ব করেন বা ৫ মিনিটের ভিডিও করেন। তাদের যে বিষয়ভিত্তিক দারস আছে এটাই জানেন না। এই পরীক্ষার সময় সুযোগ সন্ধানীরাও চেষ্টা করছে মুসলিমদের সাথে আলেমদের একটা দূরত্ব তৈরী করে দিতে, যেন মুসলিমরা নিজেদের সংশোধনে গুরুত্ব না দিয়ে সারাক্ষন অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়ে আরামের জীবনেই চলতে থাকে। সবার প্রতি অনুরোধ - সময়কে ইবাদতে কাজে লাগাবেন, জীবনের বাহুল্য ত্যাগ করবেন, ইসরায়েল সহ সকল কাফিরদের পণ্য (যদি অতীব জরুরি না হয় অথবা অন্য বিকল্প থাকে) বর্জন করবেন, পরিবার ও নিজের মধ্যে দ্বীন পালনে আরো যত্নশীল হবেন, আমাদের অত্যাচারিত সব ভাই বোনদের জন্য নিয়মিত সালাতে দুআ করবেন, সম্ভব হলে সাহায্য পাঠাবেন। দয়া করে ৫-৬ ঘন্টা বা তার চাইতেও বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরাঘুরি করাকে দ্বীনের পথে সময় ব্যয় হয়েছে বলে বিবেচনা করবেন না।
আল্লাহ আমাদের অত্যাচারিত ভাই বোনদের জন্য এই পরীক্ষা সহজ করুন। আল্লাহ তাদেরকে ধৈর্য্য দান করুন। আল্লাহ কাফিরদের এই অত্যাচারের হাতকে ভেঙে দিন। আল্লাহ আমাদের দায়িত্বশীলদের সঠিক বুঝ এবং কাফিরদের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার তৌফিক দিন।
আবু আঈশা