শব্দ দূষণ এবং আমাদের করণীয়
আমি আদাবর শেখেরটক এলাকায় আসার প্রায় ১০ মাস সময়ের মধ্যে বাসা পরিবর্তন করছি তীব্র শব্দ দূষণের কারণে। নিচের লেখাটি সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচারের জন্য লিখেছি। সবাইকে অনুরোধ কিছুটা পরিবর্তন করে (যদি প্রয়োজন মনে করেন), একটু অন্যদেরকে শেয়ার করবেন যেন লোকেরা এটা নিয়ে কথা বলে। আমরা এইরকম অনেক সমস্যা নিয়ে একদম চুপ থাকি। যেই বাসায় ঘুমের সমস্যায় ভোগা রোগী আছে, এমন মা আছেন যারা 2 ঘণ্টা লাগিয়ে বাচ্চা ঘুম পারান এবং এরপর একটা বিকট হর্ণে বাচ্চা জেগে উঠে, তারা এই সমস্যা বুঝবেন। কেবল 11 টা থেকে সকাল 7 টা পর্যন্ত এলাকা দিয় বাহিরের কোন যানবাহন ঢুকবেনা (কেবল ভিতর থেকে বের হবে একটি গেট দিয়ে) এবং হর্ণ বাজাবেনা - এই টুকু নিয়ম প্রতিষ্ঠা করার জন্য কোন কতৃপক্ষের কাওকে পাইনি।
https://bdnews24.com/bn/detail/bangladesh/1987380
সোমবার ‘প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনায় টেকসই কর্ম পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দিনে রাতে সবসময়ই বিকট শব্দের হর্নে অতিষ্ঠ মন্ত্রী তার তিক্ত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং বিশ্বব্যাংকের যৌথ আয়োজনে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা দেখছি গাড়িতে বিনা কারণে হর্ন বাজায়। রাত্রে আমার নিজেরই ঘুম হয় না। তখন আমার মনে হয় আমি পরিবেশমন্ত্রী, আমিই ঘুমাতে পারতেছি না হর্নের শব্দে। তাহলে আমার ঢাকা সিটির মানুষ কীভাবে ঘুমাচ্ছে।”
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, “আমরা অকারণে গাড়িতে হর্ন বাজাই, মাইলের পর মাইল, তাও এমন হর্ন যেটা নিষিদ্ধ, ‘টেইটং টেটাইটং টং’।
“এ হর্নের কারণে আমি রাত ৩টা-৪টার সময়ও ঘুমাতে পারছি না। এগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যথাযথভাবে দায়িত্ব নিয়ে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং বাধ্য করতে হবে।”
স্বয়ং মন্ত্রী মহোদয়ের কথা শুনে মনে হল এই ক্ষেত্রে ব্যাক্তি পর্যায়ে কী করা যেতে পারে। কয়েকটি পয়েন্ট লিখছি। এগুলো একই সাথে আমাদের মনোযোগ দেওয়ার বিষয় এবং কিছুটা বিরত থাকারও। অন্যদেরকে শেয়ার করবেন যেন লোকেরা এটা নিয়ে কথা বলে (কেবল শেয়ার করার জন্য নয়)। আমরা এইরকম অনেক সমস্যা নিয়ে একদম চুপ থাকি। যেই বাসায় ঘুমের সমস্যায় ভোগা রোগী আছে, এমন মা আছেন যারা ২ ঘণ্টা লাগিয়ে বাচ্চা ঘুম পারান এবং এরপর একটা বিকট হর্ণে বাচ্চা জেগে উঠে, তারা এই সমস্যা বুঝবেন।
১. মোটরযানের মালিকদের ড্রাইভার নিয়োগ দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে কেবল দুর্বল ও অদক্ষ ড্রাইভারই অনবরত হর্ণ দিতে থাকে যেন কোন অঘটন না ঘটে। যে ড্রাইভার কে “রাস্তার মোড়ে এসে কী করতে হবে” - জিজ্ঞেস করলে বলে হর্ন দিতে হবে, সে ড্রাইভার ব্রেক কষলেই, এমনকি স্পীড ব্রেকার দেখলেও হতাশায় হর্ন দেয়। এমন অদক্ষ ড্রাইভার নিয়োগ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
২. আপনি মোটরযানের মালিক এবং কোন কারণে মধ্যরাতে আপনি বাসায় ফিরছেন (হয়ত চাকুরী বা আন্তর্জাতিক ফ্লাইট থেকে নামার কারণে), তাহলে আগে থেকে বাসার গার্ড কে বলে রাখুন অথবা গেটের সামনে এসে ড্রাইভারকে বলুন হর্ন না দিয়ে গার্ডকে ফোন দিতে। অনেক গাড়ির মালিক এই ব্যাপারে উদাসীন - নিজের বিল্ডিংয়ের সকলের এবং চারপাশের অন্যান্যদের ঘুমের দারুন ব্যাঘাত ঘটে এতে।
৩. গাড়ির হর্ণ বদলানোর সময় তীব্র আওয়াজের হর্ণ কেনা হচ্ছে কিনা তদারকী করুন। “আজকাল সাধারণ হর্ণ ব্যবহার করলে লোকেরা নড়েনা” - ড্রাইভারের এই খোঁড়া যুক্তি মেনে নিয়ে বিকট আওয়াজের হর্ণ কিনাকে বৈধতা দেবেন না।
৪. ড্রাইভারকে বিনা কারণে সময় নিয়ে চাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। অনেক ড্রাইভার মালিকের ভয়ে অনবরত হর্ন বাজাতে বাজাতে যেতে থাকে। এসময় তাদের মেজাজ ভয় (দেরী করার) এবং বিরক্তির (অন্যদেরকে মনে হয় যেন তাকে দেরী করা হয়েছে) কারণে খারাপ থাকে। এছাড়া, অনেক ড্রাইভার গাড়ি চালানো অবস্থায় ফোনে কথা বলার কারণে সহসায় হর্ণ দেয় যেন তার ভুলের কারণে অন্য কেউ তার উপর এসে না পড়ে। এসব ক্ষেত্রে মালিকের নিষ্ক্রিয় ভূমিকাই মূল কারণ।
৫. পরিশেষে ড্রাইভার নিয়োগের সময় অভিজ্ঞ্যতাকে গুরুত্ব দিন। কেবল ২ হাজার টাকা বা তার কিছু বেশি টাকা খরচ কমাতে পাশের বাড়ির সদ্য ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া কেয়ারটেকার ছেলেটাকে নিয়োগ দিবেন না।
আবু আঈশা