একটি নবদম্পতিকে বিয়ের দিন লিখা চিঠি
সকল প্রশংসা কেবল আল্লাহরই (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) যিনি তোমাদের এই দিনে নিয়ে এসেছেন। তাঁরই কাছে আবার শুকরিয়া যে, তোমাদের বিয়ের এই পবিত্র দিনটিতে তোমাদের কিছু নাসীহা করার সুযোগ পেয়েছি। বিয়ে, আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সুন্নাহ আর আল্লাহর পক্ষ থেকে এক সুন্দর উপহার – এখান থেকেই তোমাদের এক নতুন জীবনের শুরু। তোমরা যখন এই নতুন পথে পা দিচ্ছো, তোমাদের আগামীর দিনগুলোর জন্য কিছু পরামর্শ দিতে চাই। আল্লাহ আমার জন্য এটা সহজ করুন, তোমাদের জন্য উপকারী করুন আর শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। দাম্পত্য জীবনের এত দিক আছে যে সব কিছু নিয়ে একটা চিঠিতে বলা অসম্ভব প্রায়; সে জন্যই উলামায়ে কেরাম এই বিষয়ে অসংখ্য বই লিখেছেন।
তোমরা যখন দাম্পত্য জীবনের প্রথম দিন শুরু করবে, নিশ্চিতভাবে তোমরা অনেক আবেগপ্রবন থাকবে। এতে কোনো ভুল নেই, আমি জানি তোমরা দুজনেই নিজেদের পবিত্র রেখেছো এবং একে অপরের যোগ্য। বিয়ের শুরুর দিনগুলোতে পার্থিব জীবনের প্রতি যে আকর্ষণ থাকে, দুঃখের বিষয়, পরের দিকে তা সেভাবে ফিরে আসে না। তবে, কিছু ভাগ্যবান মানুষ (আল্লাহর ইচ্ছায়) আছেন, যারা বিয়ের শুরুর এই মধুর সময়টা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেন। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর স্ত্রী খাদিজা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)-এর জন্য যেভাবে শোক করেছিলেন, সেটা একটা দারুণ উদাহরণ। যদি তোমরা গভীরভাবে একটু ভাবো, দেখবে আমাদের মা (উম্মুল মু’মিনীন) খাদিজা (রা.) বয়সে অনেক বড় ছিলেন, অথচ আমাদের বাবা (নবী ﷺ) তাঁর কবরের পাশ থেকে সরছিলেন না। এটা কিন্তু শুধু শারীরিক আকর্ষণ ছিল না; বরং তাঁদের মধ্যকার গভীর মানসিক বন্ধনই বয়সের এত পার্থক্য সত্ত্বেও এমন এক অসাধারণ দম্পতি তৈরি করেছিল। আমার মূল কথা হলো: তোমাদের দু’জনকেই, তোমাদের জীবনসঙ্গীর সাথে মিলেমিশে কাজ করতে হবে, যেন সুন্নাহতে শেখানো এই সুন্দর দু’আটার প্রমাণ তোমরা হতে পারো – আর তা হলো একে অপরের জন্য প্রশান্তি/সাকিনাহ হওয়া।
“এবং যারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্য থেকে আমাদের জন্য চোখ জুড়ানো সঙ্গী দান করো এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য আদর্শ করো।’” (সূরা ফুরকান: আয়াত ৭৪)। তাহলে কী সেই জিনিস যা তোমাদেরকে বৃদ্ধ বয়সেও একে অপরের প্রতি আগ্রহী রাখবে? তোমাদেরকে হারাম জিনিস থেকে যেমন নিজেদের চোখকে রক্ষা করতে হবে, তেমনি এমন কাজ থেকেও দূরে থাকতে হবে যা কোনো উপকারে আসে না। আমি বিশ্বাস করি যে, আল্লাহর ইচ্ছায়, তোমরা হারাম কোনো কিছুর দিকে ঝুঁকে পড়বে না। তবে, আমি নিজেও তো অনেক সময় খবরের বা খেলা দেখতে গিয়ে ফাঁদে পড়ে যাই, এগুলো না চাইতেও এমন সব দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে যা হারামের কাছাকাছি। রাজনীতির খবরের মাঝে সিনেমার গসিপ এখন আর অবাক করার মতো কিছু নয়। তাই, আমি তোমাদেরকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এর ব্যাপারে সাবধান থাকতে অনুরোধ করছি। এটা সবচেয়ে বিপজ্জনক, কারণ অনেক সময় ‘দাওয়াত’-এর নাম করে মুসলিম যুবকেরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যায় আর অকারণে বিপরীত লিঙ্গের সাথে কথা বলা শুরু করে। আর যাদেরকে তুমি আল্লাহর পথে ডাকছো, একটা কুরআনের আয়াত বা হাদিসে একটা লাইক পড়লেও হয়তো তারা আসলে কিছু শেখে না। তবে এর চেয়েও বড় কথা হলো, তোমরা, বিশেষ করে তোমাদের জীবনসঙ্গী, তোমাদের বা তাদের বন্ধুদের অনৈসলামিক জীবনযাপন দেখে বঞ্চিত বোধ করতে পারো: যেমন কাফের দেশে ঘুরতে যাওয়া, বিয়ের জাঁকজমকপূর্ণ ছবি দেওয়া, নতুন সিনেমার রিভিউ নিয়ে কথা বলা ইত্যাদি। আমরা অনেকে ভাবি, এইসব দেখে আমরা প্রভাবিত হবো না। কিন্তু একটা খারাপ দিনে, যখন তোমার জীবনসঙ্গীর হতাশবোধ হচ্ছে সংসারের চাপে, এমন চিন্তা তার মনে আরো গভীর দাগ কাটতে পারে। স্ত্রীরা হয়ত ভাবতে শুরু করে এই জীবন বেছে নিয়ে সে নিজের ক্ষতি করেছে আর তার বান্ধবীরা বাইরে বেপর্দা ঘুরে, তথাকথিত অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পেয়ে অর্জন করেছে অনেক।
একটু ভেবে দেখো তো, তোমার জীবনসঙ্গী (স্ত্রী), তোমার মতোই পরিবেশে বড় হয়ে, কেমন করে সময় কাটাবে? আমরা ছেলেরা তো কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী বা বন্ধুদের সাথে বেশ আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতে পারি, কিন্তু আমাদের নারীরা যারা শুধু ঘর সামলাচ্ছে, তাদের জন্য ঘরে বসে থাকাটা সহজ হয় না, অনেক যুদ্ধ করতে হয়। আমার পরামর্শ হলো, তুমি ওর জীবনটাকে একটা করে দাও, রোজ সেরা আচরণ দিয়ে ওকে অবাক করো। তোমার শক্ত কাঁধে ওর ভরসা হও, ওকে এমন জায়গায় নিয়ে যাও যেখানে সে ভালো বোনদের সাথে মিশতে পারে, ওর সাথে পড়াশোনা করো, ওকে যা পারো শেখাও, ওর সাথে খেলো, ওর কাছের মানুষদের ভালোবাসো, দেখবে সেও তোমার কাছের মানুষদের ভালোবাসতে শিখবে। ওকে গৃহস্থালির কাজে সাহায্য করো এবং ওর অবদানের স্বীকৃতি দাও; যদি কখনো কিছু চায়, মুখের দিকে তাকিয়ে বিরক্তি দেখাবে না। কারণ, আল্লাহ তাকে তোমার উপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল করেছেন। যদি সে এমন কিছু চায় যা তার দ্বীনদারির জন্য ক্ষতিকর, তবে ওকে নরম করে বুঝিয়ে দিও। আমাদের সালাফদের সমাজের মতো, আমাদের নারীদের আজ আনসার বা মুহাজির নারীদের সাথে মেলামেশার সুযোগ নেই। তাই, যখন তুমি কর্মস্থলে দূরে থাকবে, দিনের মাঝখানে ওকে কল করো বা মেসেজ করো। আমার শ্বশুরমশাই তো আমার এই কাণ্ড দেখে হাসতেন! কিন্তু, আমি এখনও কাজের সময় কয়েকবার বাড়িতে (আমার স্ত্রী, আমার বাবা-মা, আমার সন্তানদের) ফোন করি। আল্লাহই ভালো জানেন, আমি এটা আল্লাহর জন্যই করি।
এবার আসি সেই অংশে যেখানে আমি বলেছিলাম যে তোমরা প্রথম দিনগুলোতে এতটাই আবেগপ্রবণ থাকবে যে শয়তান তোমাদের আবেগ এবং রাগ নিয়ে খেলতে শুরু করবে। তোমরা একে অপরকে চিনতে ও জানতে গিয়ে দেখবে অনেক বিষয়েই মতের অমিল হচ্ছে, যেখানে তোমাদের দু’জনকেই শান্তিতে থাকার জন্য আপস করতে হবে। আমি এখানে দুনিয়াবী বিষয়গুলোর কথা বলছি। যখন কোনো বিষয় আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কর্তৃক নির্ধারিত, তখন আপসের কোনো প্রশ্নই নেই; তোমাদের কেবল সেই বিষয়ের বিধান মেনে নিতে হবে। তোমাদের জন্য বিষয়টা সহজ করতে আমি একটা উদাহরণ দেব: বৈবাহিক জীবনের শুরুতে আমি রাতে বাতি জ্বালিয়ে ঘুমাতাম, স্ত্রীর অনেক অনুরোধের পর ও আমি এই অভ্যাস ছাড়িনি । অথচ আমার বড় মেয়ের জন্মের পরেই আমি এই অভ্যাস পরিবর্তন করি। যদি আমি আমার স্ত্রীর অনুরোধের পর পরই এটা করতাম, তবে আল্লাহর চোখে আমি আরও ভালো করতে পারতাম। একই সময়ে, আমার স্ত্রীও আমার অনুরোধে তার অনেক অভ্যাস ত্যাগ করেছেন।
এই আবেগপ্রবণ দিনগুলোর আরেকটি দিক হলো শয়তানের কুমন্ত্রণা, যা তুচ্ছ বিষয়েও রাগ সৃষ্টি করে। তোমরা সেই বিখ্যাত হাদিসটি জানো, যেখানে শয়তান দিনের শেষে তার সঙ্গীদের কাছে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভাঙার সাফল্যের খবর শুনে আনন্দিত হয়। তাই, শয়তানের ষড়যন্ত্রের উপর জয়ী হতে রাগ নিয়ন্ত্রণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিষয় (রাগের শুরু) মোকাবিলা করার মূলনীতি হলো সূরা ফুরকানে বর্ণিত আগের দু’আটার উপর অটল থাকা। এছাড়াও, তোমাদের উভয়কেই (স্বামী ও স্ত্রী) নিজেদের সমস্যা বেডরুমের মধ্যেই সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে অটল থাকতে হবে। নিজের কথা ঠিক প্রমাণ করতে গিয়ে কখনো একজন আরেকজনের প্রতি গলা উঁচু করো না; এটা শুধু শুধু ঝগড়া বাড়ায়। গলা যত উঁচু করবে, পরিস্থিতি তত খারাপ হবে। আর কোন ব্যাপারে তোমার সিদ্ধান্ত ধীরস্থির এবং গম্ভীর ভাবে উল্লেখ করলেই বরং অপরপক্ষের জন্য সেটার য়পর আমল করা সহজ হয়। সুতরাং, রাগের মুহূর্তে ওযু করো, রাগের কথাগুলো ভেতরে চেপে রাখো, ভাবো যে আল্লাহর ইচ্ছায় পরিস্থিতি কিছুক্ষণের মধ্যেই ভালো হয়ে যাবে, তোমাদের ভালো মুহূর্তগুলোর কথা ভাবো, কথার প্রসঙ্গ বদলাও বা মেনে নেওয়ার চেষ্টা করো যে তুমি ভুল ছিলে। উভয় পক্ষের এই অভ্যাস প্রতিদিন সম্পর্ককে উন্নত করবে এবং তোমরা দেখতে পাবে যে ঝগড়া মিনিটের মধ্যে সমাধান হয়ে যাচ্ছে এবং প্রতিটা ঝগড়ার পর তোমরা একে অপরকে আগের চেয়েও বেশি ভালোবাসছো; কারণ, তোমরা তোমাদের সম্পর্ক ছিন্ন করার শয়তানের ষড়যন্ত্রকে পরাজিত করেছো। আমি তোমাদের এবং তোমাদের জীবনসঙ্গীকে দুটি হাদিস স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যা একে অপরের প্রতি ভালো আচরণ করার জন্য সর্বদা মনে রাখা উচিত। তবে, তোমরা একে অপরকে তার সংশ্লিষ্ট হাদিসটি স্মরণ করিয়ে দেবে না। বরং, যে হাদিসটি তোমার প্রতি নির্দেশিত, তা থেকে নিজের জন্য উপদেশ গ্রহণ করো।
স্বামীর জন্য: (১) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর স্ত্রীর প্রতি সদয় আচরণ ও সম্মান করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সর্বোত্তম ব্যক্তিকে তিনি সেই ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যে তার স্ত্রীর প্রতি সর্বোত্তম। তিনি বলেন: “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই শ্রেষ্ঠ, যে তার স্ত্রীর প্রতি শ্রেষ্ঠ। আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের প্রতি শ্রেষ্ঠ।” (তিরমিযী, ৩৮৯৫; ইবনে মাজাহ, ১৯৭৭; আল-আলবানী কর্তৃক সহীহ তিরমিযীতে সহীহ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ)।
স্ত্রীর জন্য: (২) ইবনে মাজাহ (১৮৫৩) বর্ণনা করেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে আবি আওফা (রা.) বলেন: যখন মু’আজ (রা.) সিরিয়া থেকে এলেন, তিনি নবী (সালফাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সেজদা করলেন। নবী (সা.) বললেন, “হে মু’আজ, এটা কী?” তিনি বললেন, আমি সিরিয়াতে গিয়েছিলাম এবং তাদের মহাবিষপ ও পিতৃতান্ত্রিকদের সেজদা করতে দেখেছি, তাই আমি আপনার জন্যও তা করতে চেয়েছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, “তা করো না। যদি আমি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে সেজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে আমি মহিলাদের তাদের স্বামীদের সেজদা করার নির্দেশ দিতাম। যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, তাঁর শপথ! কোনো মহিলা আল্লাহ তায়ালার প্রতি তার কর্তব্য পালন করতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার স্বামীর প্রতি তার কর্তব্য পালন করে। যদি সে (স্বামী) তাকে (ঘনিষ্ঠতার জন্য) ডাকে, এমনকি যদি সে তার উটের হাওদায়ও থাকে, তবুও সে যেন অস্বীকার না করে।” (আল-আলবানী কর্তৃক সহীহ ইবনে মাজাহ-তে সহীহ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ)।
(৩) ইবনে হিব্বান (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “যদি কোনো মহিলা তার পাঁচ ওয়াক্ত (দৈনিক সালাত) আদায় করে, তার মাস (রমজান) রোজা রাখে, তার সতীত্ব রক্ষা করে এবং তার স্বামীর আনুগত্য করে, তাহলে তাকে বলা হবে: ‘জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা হয়, প্রবেশ করো।’" (আল-আলবানী কর্তৃক সহীহ আল-জামি’তে, নং ৬৬০, সহীহ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ)।
এবং স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের প্রতি, সর্বদা মনে রাখবে: আমাদের প্রতিপালক বলেন (অর্থের ব্যাখ্যা): ৩৪. “সৎকর্ম এবং অসৎকর্ম সমান হতে পারে না। (মন্দকে) তা দ্বারা প্রতিহত করো যা উৎকৃষ্ট (অর্থাৎ, আল্লাহ বিশ্বস্ত বিশ্বাসীদের রাগের সময় ধৈর্য ধারণ করতে এবং যারা তাদের সাথে খারাপ আচরণ করে তাদের ক্ষমা করতে নির্দেশ দেন), তাহলে যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিল, সে (যেন) তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। ৩৫. কিন্তু তা (উপরোক্ত গুণ) কেবল তাদেরকেই দেওয়া হয় যারা ধৈর্যশীল – এবং তা কেবল মহান অংশের অধিকারীকেই দেওয়া হয় (আখেরাতে সুখের, অর্থাৎ জান্নাত এবং এই পৃথিবীতে উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারীকেই)।” [সূরা ফুসসিলাত ৪১:৩৪-৩৫]
এই দীর্ঘ লেখাটার মূল উদ্দেশ্য হলো, তোমরা আমাদের সমাজে একটা বড় বাধা পেরিয়ে এসেছো – অল্প বয়সে বিয়ে করা। এখন, তোমাদের সামনে আরও চ্যালেঞ্জিং একটা কাজ আছে: সমাজ বা তোমাদের চারপাশের মানুষ (যারা দীনের গভীরতা বোঝে না), সচেতন বা অচেতনভাবে, সব সময় প্রমাণ করার চেষ্টা করবে যে অল্প বয়সে বিয়ে করাটা মোটেও ভালো না। তাই, তোমাদের প্রতি নানা কথা শুনতে হবে (যে কোনো দিক থেকে আসতে পারে), যা তোমাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। এই বিষয়গুলো তোমাদের সাবধানে সামলাতে হবে এবং ওরা যা চায়, সেই ফাঁদে কখনোই পা দেবে না। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর এই কথাগুলো মনে রাখবে:
“মুমিনের ব্যাপারটা কতই না চমৎকার! তার প্রতিটি কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া আর কারো এমন হয় না। যদি তার সাথে কোনো ভালো কিছু ঘটে, সে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, আর এটা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তার সাথে কোনো মন্দ কিছু ঘটে, সে ধৈর্যধারণ করে, আর এটা তার জন্য কল্যাণকর হয়।” (মুসলিম, ২৯৯৯)।
সুতরাং, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঝগড়ার সময়েও শয়তানকে তোমাদের সিদ্ধান্ত নষ্ট করতে দেবে না। আল্লাহর সাহায্য চাও। আল্লাহর কিতাব এবং নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুন্নাহর আলোকে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করো। যদি তোমাদের নিজেদের মধ্যে মীমাংসা না হয়, তাহলে সতর্ক হয়ে এমন কারো সাথে কথা বলো, যে তোমাদের গোপন কথা রাখবে। সমাধানের জন্য শেয়ার করো – শুধু কষ্ট কমানোর জন্য নয়। তোমাদের কাছের মানুষের গীবত করাটা সবচেয়ে খারাপ কাজ।
এই আনন্দের দিনে এর চেয়ে বেশি লম্বা করে তোমাদের আর কষ্ট দিতে চাই না, তাই এখানেই শেষ করছি। যদি আমাকে একটু ‘বুলি’ মনে হয়, তার জন্য মন থেকে দুঃখিত (আসলে কিন্তু এমন কোনো উদ্দেশ্য ছিল না! 😊)। শেষে, মজলিস শেষের দু’আ পাঠ করছি: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আস্তাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক। “হে আল্লাহ, তুমি কতই না পবিত্র! আর আমি তোমার প্রশংসা করি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি এবং তোমার দিকেই ফিরে আসছি।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)।